Skip to main content

নাসিরুদ্দীন হোজ্জা

১/ বিবির পিড়াপিড়িতে নাসিরুদ্দিন
হোজ্জা একটা গরু কিনল।কিন্তু গরু ও গাধার
জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত
যায়গা না থাকায়,
একটা ঘুমালে আরেকটাকে দাড়িয়ে থাকতে হতো।
প্রিয় গাধার এই
দুরবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন খোদার
কাছে প্রার্থনা করছে:
হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল
যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম
করে ঘুমাইতে পারে
পরদিন সকালে সে গোয়াল
ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পরে আছে।
প্রানপ্রিয় গাধার মৃত্যুতে দুঃখিত ও হতাশ
হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের
দিকে তাকায়ে বলল:
কোন অভিযোগ করবনা, খোদা, কিন্তু
তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক
হয়েও, কোনটা গরু
কোনটা গাধা এইটা চিনলানা!
২/ একবার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা অসুস্থ।
নিজের গাধাটাকে খাওয়ানোর জন্য
বিবিকে বললেন।হোজ্জার বিবি একটু
ত্যাদড় টাইপের।সে গাধা কে খাবার
দিতে অস্বীকার করল।দুজনের মধ্যে এই
নিয়ে তুমুল ঝগড়া।তারপর
একটা সমঝোতা হল,
যে আগে কথা বলবে সে গাধাকে খাওয়াবে।
হোজ্জা বাজিতে জেতার
ব্যপারে ডিটারমাইন্ড ছিল।
সেইদিনই, হোজ্জার বিবি বাইরে গেছে,
খালি বাসা দেখে একটা চোর ঘরে ঢুকল।
হোজ্জা বাসায় ছিল, কিন্তু
বাজিতে হেরে যাওয়ার ভয়ে চোরকে কিছু
বলল না।চোর নির্বিঘ্নে ঘরের সব কিছু
নিয়ে চলে গেল।হোজ্জার স্ত্রী বাসায়
ফিরে এসে যখন দেখল সব কিছু খালি,
চিৎকার দিয়ে বলল, হায় আল্লা! কি হইছে?
হোজ্জা খুশিতে লাফিয়ে উঠল,
আমি জিতছি বাজিতে, এখন তোমারেই
গাধাকে খাওয়ান লাগবে।
৩/ রাজার মেজাজ খারাপ।রাজপ্রাসাদ
থেকে বেরিয়ে শিকারে যাওয়ার
পথে হোজ্জা সামনে পড়ে গেলেন।
শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জার
সামনে পড়ে যাওয়াটা আমার ভাগ্যের জন্য
খারাপ, প্রহরীদের রাগত গলায় বললেন
রাজা।আমার দিকে ওকে তাকাতে দিয়ো না-
চাবুকপেটা করে ওকে পথ
থেকে সরিয়ে দাও।
প্রহরীরা তা-ই করল।
শিকার কিন্তু ভালোই হলো।
রাজা হোজ্জাকে ডেকে পাঠালেন।
আমি সত্যি দুঃখিত, হোজ্জা।ভেবেছিলাম
তুমি অশুভ।কিন্তু তুমি তা নও।
আপনি ভেবেছিলেন আমি অশুভ!
হোজ্জা বললেন।আপনি আমাকে দেখার পর
ভালো শিকার করেছেন।আর
আমি আপনাকে দেখে চাবুকপেটা খেয়েছি।
কে যে কার অশুভ, বুঝলাম না।
৪/ একদিন হোজ্জা তার প্রিয় গাধার
পিঠে লবণ বোঝাই করে বাজারের
দিকে রওনা দিলেন। পথে একটা নদী পড়ল।
গাধাসহ নদী পার হলেন।কিন্তু নদীর
পানিতে লবণ গলে একাকার।পণ্য
হারিয়ে হোজ্জা বিরক্ত।
গাধা তো মহা খুশি বোঝা থেকে বেঁচে গিয়ে।
এর পরেরবারও হোজ্জা ওই পথ
দিয়ে গেলেন, তবে এবার তুলা বোঝাই
করে।গাধা যখন নদী পার হলো তখন
তুলা ভিজে ওজন বেড়ে গেল।গাধা ওজনদার
মাল নিয়ে টলমল
পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল।হাহ্!
হোজ্জা চেঁচিয়ে বললেন, কেমন জব্দ!
ভেবেছিলি প্রতিবার
পানি দিয়ে গেলে পিঠের ওপরের মালের
ওজন কমে যাবে, তাই না?
৫/ হাটবারের দিন রাস্তায়
দাঁড়িয়ে জড়বুদ্ধির মতো আচরণ করতেন
হোজ্জা, ফলে নির্বোধ ভেবে মানুষ
তাকে মুদ্রা দান করত। কিন্তু তার
সামনে দুটি মুদ্রা তুলে ধরা হলে, সর্বদাই
তিনি ছোট মুদ্রাটি গ্রহণ করতেন, যতবারই,
যেভাবেই দেয়া হোক না কেন।
একদিন সদাশয় এক ব্যক্তি তাকে বললেন,
"নাসিরুদ্দীন, তুমি তো বড়
মুদ্রাটা নিতে পার। এতে তোমার দ্রুত বেশ
কিছু টাকা-পয়সা জমে যাবে আর মানুষও
আগের
মতো তোমাকে নিয়ে তামাশা করতে পারবে না।"
"হুমম, আপনি যা বলছেন তা হয়তো ঠিক
হতে পারে। কিন্তু আমি ভাবছি,
আমি যদি সবসময় বড় মুদ্রাটা গ্রহণ করি,
তাহলে মানুষ আমাকে তাদের চেয়েও
নির্বোধ ভেবে যে আনন্দটা পায়,
সে আনন্দটা আর পাবে না, ফলে দান
হয়তো একেবারেই বন্ধ করে দিবে।"
হোজ্জা জবাব দেন।

Comments

Popular posts from this blog

তোমার বাড়ির রাস্তাটার মায়াই পরেছি

তোমার বাড়ির রাস্তাটার মায়াই পরেছি তোমার বাড়ির ফুলগাছটার মায়াই পরেছি তোমার বাড়ির গেটের আমি মায়াই পরেছি তোমার বাড়ির জানালার মায়ায় পরেছি এই ভেবনা তোমার বাবার ধনের লোভে পরেছি হায় হায় হায় হায়রে হায় তোমায় ভালবেসেছি তোমার বাড়ির ছাদের আমি মায়ায় পরেছি তোমার বাড়ির বারান্দার মায়ায় পরেছি তোমার পরার টেবিলের মায়ায় পরেছি তোমার বাড়ির ময়না পাখির মায়ায় পরেছি এই ভেবনা তোমার বাবার ধনের লোভে পরেছি হায় হায় হায় হায়রে হায় তোমায় ভালবেসেছি তোমার বাকা ঠোটের হাসির মায়ায় পরেছি তোমার কাজল কালো চোখের মায়ায় পরেছি তোমার চুলের গন্ধের মায়ায় পরেছি তোমার সুন্দর নাকের আমি মায়া পরেছি এই ভেবনা তোমার কায়ার মায়ার লোভে পরেছি হায় হায় হায় হায়রে হায় তোমায় ভালবেসেছি তোমার হেলেদোলে চলার মায়ায় পরেছি তোমার চোখের চাহনির মায়ায় পরেছি তোমার এলো কেশের আমি মায়ায় পরেছি তোমার মুখের মিষ্ট কাথার মায়ায় পরেছি এই ভেবনা তোমার কায়ার মায়ার লোভে পরেছি হায় হায় হায় হায়রে হায় তোমায় ভালবেসেছি তোমার লাল দোপাট্টার মায়ায় পরেছি তোমার ঐ কপলের টিপের মায়ায় পরেছি তোমার পায়ের নুপুরের মায়ায় পরেছি তোমার নাকের নুলকের মায়ায় প...

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে --লালন কি বলে

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে আমরা ভেবে করবো কি ওরে ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম তোমরা তাদের বলবে কি ছয় মাসের এক কন্যা ছিল নয় মাসে তার গর্ভ হলো আবার এগারো মাসে তিনটি সন্তান কোনটা করবে ফকিরী ফকিরী ঘর আছে তার দুয়ার নাই লোক আছে তার বাক্য নাই কেবা তাহার আহার যোগায় কে দেয় সন্ধা বাতি সন্ধ্যা বাতি লালন ফকির ভেবে বলে মায়ে ছুইলে পুত্র মরে আরে এই কথার মান না জানিলে হবে না তার ফকিরী ফকিরী।। চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে এখন দেখা যাক এই গানের মাধ্যমে লালন কোন তথ্য আমাদের কাছে পৌচ্ছে দিতে চেয়ে ছিলেনঃ Uterus, a hollow organ inside a women's body where a baby grow up after fertile egg and sperm matches চাঁদের মতো গোলাকার দেখতে মাতৃগর্ভ আর শিশুকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয় এক চাঁদকে তুলনা করা হয়েছে মাতৃগর্ভের সাথে আরেক চাঁদ হলো ভ্রুন ছয়মাসের ভেতর এই ভ্রুনে জীবনের সঞ্চার হয় নয়মাসে এই ভ্রুন পরিপুর্ন শিশু হয়ে পৃথিবীতে আসার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় আর এগারো মাসে এই শিশু হাটতে শেখে (আমার শিশুরা ৯ মাসেই হাটতে শুরু করে – স্টান্ডার্ড সময় ১১ মাস) হাটার আগে শিশু হামা দিয়ে চিনে নেয় তার পরিসর ...

আর কতদিন জানি

শিরোনাম : "আর কতদিন জানি " কথা ও সুর : মহাত্মা লালন সাঁই আর কত দিন জানি, এ অবলার প্রান ই এ জ্বলনে জ্বলিবে ওহে দয়েশ্বর চিরদিনই দুঃখেরই অনলে প্রাণ জ্বলিছে আমার চিরদিনই দাসী মরলে ক্ষতি নাই, যাইহোক মরে যাই তোমার দয়াল নামের দোষ রবেরে গোঁসাই আমায় দাওহে দুঃখ যদি তবু তোমার সাধই তোমা ভিন্ন দোহাই আর দিবো কার চিরদিনই ও মেঘ হইয়ে উদয় ,লুকালে কোথায় পিপাসীর প্রাণ যায় পিপাসায় আমার কি দোষেরই ফলে এই দশা ঘটাইলে চাও হে নাথ ফিরে এখন, চাওহে একবার চিরদিনই আমি উড়ি হাওয়ার সাথ ,ধরি তোমার হাত তুমি না করাইলে কে করাবে হে নাথ আমার ক্ষমো অপরাধ দাওহে ঐ শীতল পদ লালন বলে প্রাণে সহেনা আমার চিরদিনই .